রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম ও ঢাকা স্টেশন ছাড়া মধ্যবর্তী স্টেশনে বর্তমানে টিকিট কালেক্টর পদে কোন কর্মরত কর্মচারী না থাকায় কিছু অসাধু কর্মচারী স্টেশনের মূল গেইটে দাঁড়িয়ে ট্রেনে আগত যাত্রীদের টিকিট চেক করার নামে বিনা টিকিটি যাত্রী ধরে টিসি রুমে নিয়ে হয়রানি করে জরিমানা সহ ভাড়া আদায় করে কিন্তু ভাড়া আদায়ের রশিদ অর্থাৎ রেলওয়ের ভাষায় ইএফটি রশিদ যাত্রীর হাতে না দিয়ে জোর পুর্বক ভাড়া আদায় করা কতটুকু যুক্তি সংগত? টিসি অথবা টিটিই ছাড়া গেইটে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের টিকিট চেক করার ক্ষমতা তারা রাখেন কি?
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লাকসাম স্টেশনে প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এই স্টেশনে বর্তমানে টিকিট কালেক্টর পদে কর্মরত কেউ না থাকায় স্টেশনে কর্মরত ওয়েটিং রুম বেয়ারা নুর ইসলাম ও তার সহযোগী লাকসাম স্টেশনে দায়িত্বরত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যরা মিলে আগত যাত্রীদের টিকিট চেক করার নামে বিনা টিকিটি যাত্রী ধরে টিসি রুমে নিয়ে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা রকম হয়রানি করে জরিমানা সহ ভাড়া আদায় করে। এছাড়া কোন যাত্রী কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটতে চাইলে তাকে বিভিন্ন রকম কথা বলা হয়। যেমন – সিট নাই ষ্ট্যান্ডিং টিকিট আছে। এত টাকা দিয়ে টিকিট কেন কাটবেন? দাঁড়িয়ে থেকে কত দুর যাবেন?
আমাদের কাছে ব্যবস্থা আছে ,টিকিট কাটা লাগবে না। ৪০০- ৫০০ টাকা দিলে বসে যেতে পারবেন। গাড়িতে আমাদের জানাশোনা লোক আছে, আরাম করে বসে যেতে পারবেন , কোন সমস্যা নাই, টিকিট লাগবে না, তারাই গেইট পাস করে দেবে, কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোনে জানাবেন ইত্যাদি। এসব কথা ওয়েটিং রুম বেয়ারা শুধু নুর ইসলামেই বলে না এরকম ব্যবহার লাকসাম রেলওয়ের আর এন বি তারাও যাত্রীদেরকে বলে অসাধু উপায়ে ট্রেনে কর্তব্যরত অ্যাটেনডেন্স অথবা খাবার গাড়ির স্টাফদের সঙ্গে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ট্রেনে যাত্রীদের কে তুলে দেয়।
এছাড়া লাকসাম ক্যারেজ এন্ড ওয়াগন ডিপোর রাত্রী কালীন টিএক্সআর দপ্তরের কারিগর ও খালাসী ,লাকসাম কেবিনে কর্মরত পিম্যান, লাকসাম বিদ্যুৎ বিভাগ ট্রেনলাইটিং দপ্তরে কর্মরত কর্মচারী তারাও স্টেশনের বিভিন্ন গেইটে ও প্নাটফর্মে বিভিন্ন কৌশলে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের টিকিট চেক করার নামে যাত্রী হয়রানি করে যাচ্ছে।
সিলেটগামী উদায়ন ট্রেনের কুলউড়াগামী হাসিব নামে এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, কাউন্টারে এসে টিকিট চাইলাম ওপাশ থেকে এক ভদ্র লোক বললো কোন টিকিট নাই, বললাম ষ্ট্যান্ডিং টিকিট আছে? সাফ জানিয়ে দিল কিছুই নেই। কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরএনবি বলে উঠলো আপনারা কয়জন? আমি বললাম আমরা ০৪জন। তখন তিনি বললো আমার কাছে ব্যবস্থা আছে ২হাজার টাকা লাগবে। পরে রফাদফা শেষে ১৫শ টাকায় রাজি করি। আমাদেরকে পাওয়ারকার কেবিনে তুলে দেয়।
প্রতিদিন রাতে চট্টগ্রামগামী বিভিন্ন ডাউন ট্রেনে লাকসাম স্টেশনে প্রচুর বিনা টিকিটধারী যাত্রী আসে । অ্যাটেনডেন্ট, পাওয়ারকার অপারেটর, রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ,খাবারগাড়ির স্টাফরা বিনাটিকিটি যাত্রী নিয়েআসে। মাথা পিছু ২০ টাকা করে নিয়ে যাত্রী পারাপার করে।
এছাড়া দিনে সিলেটগামী পাহাড়িকা, ঢাকাগামী চট্রলা, জামালপুর গামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন, চট্রগ্রাম অভিমুখী সাগরিকা ও কর্নফুলী কমিউটার ট্রেনের (পাওয়ারকার ও মসজিদে বসে) প্রতিদিন প্রচুর বিনাটিকিটি যাত্রী ভ্রমন করে থাকে এবং রাতে সিলেটগামী উদায়ন ট্রেনে এবং রাতে ঢাকাগামী তুর্না এক্সপ্রেস ট্রেনে লাকসাম হতে প্রচুর বিনাটিকিটি যাত্রী খাবারগাড়ী ও পাওয়ারকারে ভ্রমন করে। এদের ধরে জরিমানা করে টিকিট বানানোর কোন লোকজন লাকসাম নেই বল্লেই চলে। এসব কাজে লাকসাম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী যারা জড়িত নিন্মে তাদের নাম ও পদবী দেওয়া হলো- হাবিলদার পেয়ার আহম্মদ, সিপাহী ৬০১-ই আব্দুল মমিন,সিপাহী ১১১৯-ই তাপস দেবনাথ, সিপাহী ৪৮১-ই মীর হোসেন, সিপাহী আরিফুর রহমান,সিপাহী মেহেদী হাসান সহ প্রমুখ।
সম্প্রতি লাকসাম টিসি রুমে বসে ওয়েটিং রুম বেয়ারা নুর ইসলাম অনৈতিকভাবে দুইজন যাত্রীর কাছ থেকে জরিমানা সহ ৫শত টাকা ভাড়া আদায় করার একটি ২ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে ওয়েটিং রুম বেয়ারা নুর ইসলাম টিসির চেয়ারে বসে অনৈতিকভাবে দুইজন যাত্রীর কাছ থেকে জরিমানা সহ ৫শত টাকা হাতে নিল।
এই বিষয়ে নুর ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন।